| Home | Menu | Poems | Poets | Reading | Theme | Biography | Articles | Photo | Dictionary | Chat | Video | Shop | Extra | Jokes | Games | Science | Bio | বাংলা

দিলওয়ার খান Dilowar Khan Biography 1937-



*পাখীর দৃষ্টিতে দিলওয়ার
'গণমানুষের কবি' দিলওয়ার
পৃথিবী স্বদেশ যার
আমি তার সঙ্গী চিরদিন ৷


If you cannot view the fonts properly please download and Install this file.

দিলওয়ার হলেন 'আপাদমস্তক কবি' ৷ তাঁর কাছাকাছি থেকে যারা তাঁর সৃষ্টিশীলতার স্বতঃস্ফূর্ততা দেখেছেন, তাদের কাছে তিনি শ্বাশত 'গড্ গিফ্টেড্ পয়েট' ৷ তবে তিনি সবখানে 'গণমানুষের কবি' হিসেবে অধিক পরিচিত ৷ এ সম্পর্কে কবি-র মন্তব্য- "আমাকে 'গণমানুষের কবি' এই অভিধায় চিহ্নিত করা হয়েছে ৷ যৌবনের শুরু থেকেই আমি এই সত্যের আলোকবর্তিকা হাতে নিয়ে এগিয়ে চলার চেষ্টায় নিয়োজিত ৷ 'গণমানুষ' শব্দটি এমন এক ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী, যার কাছে পৃথিবীর সমুদয় জ্ঞান এবং বিজ্ঞান শির নত করে দাঁড়াতে বাধ্য। কেননা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে ২০ লাখ বছরের পুরনো মানবজীবনে দৃশ্যমান হয়ে আকাশ থেকে এমন কিছু নেমে আসেনি, যা মানুষের গণমানবিকতাকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে ৷ বিশ্বের ধনী-নির্ধন মানুষমাত্রই শুরুতে প্রাগৈতিহাসিক এবং পরবর্তী সময়ে ঐতিহাসিক পরিবর্তনশীলতার উত্তরাধিকারী ৷ এই চিরায়ত সত্যকে বাংলাদেশের জীবনমন্ত্র হিসেবে অবশ্যই ধারণ করতে হবে ৷ এই ধারণক্ষমতা অর্জন করতে পারলে সব কল্পিত ও বাস্তব আশংকা এবং আতংক থেকে বৃহত্তর মানবগোষ্ঠীর মুক্তি ঘটবে ৷ বলিষ্ঠ আনন্দ নিয়ে প্রোজ্জ্বল জীবন, সীমাহীন আকাশের নিচে এসে অবশ্যই দাঁড়াতে পারবে ৷ আমি আলো, বায়ু, জল ও অম্লজানের মতো আশাবাদী ৷ কেননা যেদিন প্রাকৃতিক এই চতুষ্টয় আশীর্বাদ নির্মূল হয়ে যাবে, সেই দিনই ঘটবে আমার রক্ত-মাংসের জীবনের শেষ পরিণতি। আমার কবিতা আমাকে দেশ এবং পৃথিবীর ধমনীতে জিইয়ে রেখেছে ৷ "

(সূত্র- সূর্য অস্ত যায় না কখনও, দৈনিক যুগান্তর, ১ জানুয়ারী ২০০৩)

জন্ম ও পরিবার পরিচয়

*পদ্মা-সুরমা-মেঘনা-যমুনা
অশেষ নদী ও ঢেউ
রক্তে আমার অনাদি অস্থি
বিদেশে জানেনা কেউ!
দিলওয়ার ৷ পুরো নাম দিলওয়ার খান ৷ কিন্তু তিনি অন্য ধাতুতে তৈরী ৷ গণমানুষের জন্যে নিবেদিত, খ্যাতি-অখ্যাতির প্রতি সমানভাবে নির্বিকার, জনমনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করলেন খান উপাধি বাদ দিয়ে, শুধু 'দিলওয়ার' নামে পরিচিতির মাঝে ৷ জন্ম ১লা জানুয়ারী ১৯৩৭ সাল ৷ সিলেট জেলার সুরমা নদীর দক্ষিণ পারে ভার্থখলা গ্রামে একটি রক্ষণশীল পরিবারে তাঁর জন্ম ৷ পিতা মৌলভী মোহাম্মদ হাসান খান এবং মাতা রহিমুন্নেসা ৷ দিলওয়ার চার ভাই ও চার বোনের মধ্যে সপ্তম ৷ তাঁর পিতামহ মহসিন খান এবং মাতামহ ইয়াসিন মিয়া ৷ অবিভক্ত ভারতবর্ষে কবি দিলওয়ার-এর জন্ম ৷ অথচ কবি-র জন্মভূমি কেমন হওয়া উচিত ছিলো, সে সম্পর্কে কবি বলছেন-" কবি-র রাজ্যে রাজা-বাদশা-র কিংবা রাজ্যসাম্রাজ্যের উত্থান-পতনের বুকফাটা হাহাকার অথবা উল্লাসের অট্টহাস্য নেই ৷ এই রাজ্যে রয়েছে এক অখন্ড- জীবনবোধ, যার প্রেম-প্রীতি, সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না দক্ষিণমেরু থেকে উত্তরমেরু অবধি বিস্মৃত! কালের শুভেচ্ছায় কবি ও কবিতার জগত্‍ চিরসবুজ, অবিনাশী যৌবনের প্রতীক!" (এককথা, 'দিলওয়ার', ১ জানুয়ারী ২০০৫)

কর্ম জীবন

*যতোদিন বেঁচে আছো ততোদিন মুক্ত হয়ে বাঁচো
আকাশ-মাটির কন্ঠে শুনি যেন তুমি বেঁচে আছো ৷
সিলেটের দক্ষিণ সুরমা হাইস্কুলের শিক্ষক হিসেবে দিলওয়ার কর্মজীবন শুরু করলেও মাত্র দু'মাস পর তিনি শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে দেন ৷ যুক্ত হন সাংবাদিকতায় ৷ তিনি ১৯৬৭ সালে দৈনিক সংবাদের সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেন ৷ ১৯৬৯ সালে এই দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে তিনি সিলেটে চলে আসেন ৷ ঊনসত্তরের গণআন্দোলনের সঙ্গে একাত্ম হয়ে সিলেটের কবি-সাহিত্যিক-সাংবাদিকদের নিয়ে গঠন করেন 'সমস্বর লেখক ও শিল্পী সংস্থা' এবং উনসত্তরের গণআন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত সমস্বর-কে স্বাধীনতার প্রতীকে কাজে লাগান ৷ প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে স্কুলজীবন থেকেই তিনি রাজধানীর পত্রপত্রিকায় লিখতে শুরু করেন এবং তার কোনো বিরতি আজ অবধি হয়নি ৷ প্রসঙ্গতঃ এটাও উল্লেখ্য যে প্রকৃতি তাঁকে অর্থমূল্যে বিক্রি হওয়ার জন্য কবি করে পাঠায়নি ৷

স্বাধীন বাংলাদেশে আবার তিনি ঢাকায় ১৯৭৩-৭৪ সালে অধুনালুপ্ত দৈনিক গণকন্ঠের সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন ৷ ১৯৭৪ সালে তিনি ঢাকাস্থ রুশ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র থেকে প্রকাশিত মাসিক উদয়ন পত্রিকার সিনিয়র অনুবাদক হিসেবে প্রায় দুই মাসের মতো কাজ করেন ৷ তিনি স্বেচ্ছায় উক্ত চাকুরীটি ছেড়ে সহধর্মিনী-র আহবানে সিলেটে ফিরে আসেন ৷ ১৯৭৫-এ ১ম সহধর্মিনীর মৃত্যুর পর কবি-র কর্মজীবন মূলতঃ ফ্রীলেন্স সাংবাদিকতায় লেখক জীবনের বৈচিত্র নিয়ে আসে ৷ সিলেটের স্থানীয় সব ক'টি পত্রিকা, প্রবাসী বাংলা ভাষাভাষী পত্রিকা এবং জাতীয় পত্রপত্রিকায় কবি, ফ্রীলেন্স লেখক হিসেবে আগে এবং এখনও অজস্র লেখা বেরিয়েছে ৷

সংসার জীবন

*একটি গোলাপ চারা নিরন্তর বলে যায়
প্রাঙ্গণে কী গোরস্থানে, যেখানেই রোপন করো তুমি
আমি জন্ম দেবো ফুলের রাণী গোলাপ ৷
লাগাতার অসুখে আক্রান্ত কবি সংসারজীবনে প্রবেশের কথা কল্পনাও করেননি ৷ ১৯৫০ থেকে ১৯৬০ এর দশকে কবি-র নাক ও গলায় রক্তক্ষরণের দেখা দেয় ৷ চিকিত্‍সা থাকাকালীন কবি দিলওয়ার সাক্ষাত্‍ পান একজন মহিয়সী রমনী-র, সিনিয়র স্টাফ নার্স আনিসা খাতুন ৷ উর্দূভাষিণী আনিসা-ই কবি দিলওয়ারের প্রথম এবং অন্তিম প্রেমসত্তা ৷ ১৯৬০ সালে কবি আনিসার সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন ৷ প্রফেসার মোঃ আব্দুল আজিজ রচিত 'স্মৃতি বিস্মৃতির প্রজন্ম' (প্রকাশকাল ১৩ ফেব্রম্নয়ারি ১৯৯৩) গ্রন্থে-র 'যে দীপ জ্বলেঃ আনিসা দিলওয়ার' নিবন্ধটি পাঠ করলেই সে সত্য উপলব্ধ হবে ৷ পাঠকের সুবিধার্থে এখানে তা তুলে ধরা হলো-

"মানবতার সেবায় নিবেদিত প্রাণ এক মহিয়সী মহিলা ছিলেন আনিসা দিলওয়ার ৷ আর্ত মানুষের সেবা করা শুধু যে তাঁর পেশা ছিল, তা নয় ৷ এটা তাঁর নেশাও ছিল ৷ তাঁর স্নেহ কোমল পরশে মুমূর্ষু রোগীও নতুন প্রাণ ফিরে পেত ৷ আনিসার সেবা পরায়ণতা আমাদের ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল-এর কথা স্মরণ করিয়ে দেয় ৷ সেবাব্রতে তিনি ছিলেন নাইটিঙ্গেল-এরই সার্থক উত্তরসূরী ৷ ''

হাসপাতালের সেবিকা গার্হস্থ্য জীবনেও সেবিকার ব্রত নিয়ে ছিলেন ৷ তাঁর সেবা শুশ্রূষার গুণে দিলওয়ারের কাব্য প্রতিভা বিকাশ লাভের অবকাশ পায় ৷ তাছাড়াও তিনি ছিলেন দিলওয়ারের সৃষ্টি কর্মের অফুরন্ত প্রেরণার উত্‍স-তাঁর কবি জীবনের পরিপূরক সত্তা ৷ আমাদের সাহিত্যের ইতিহাসে দিলওয়ারের সাথে আনিসা দিলওয়ারের নামও একই সাথে উচ্চারিত হবে ৷ যৌবনে অনুপম সৌন্দর্যের অধিকারিনী ছিলেন আনিসা ৷ স্বভাবঃতই তাঁর অনুরক্ত স্তাবকদের সংখ্যা ছিল অনেক ৷ হাসপাতালে শিক্ষানবিশী ডাক্তারদের কেউ কেউও ছিলেন সে দলভুক্ত ৷ দিলওয়ারের সাথে আনিসার বিয়ের ফলে অনেকেরই আশা ভঙ্গ হয় ৷ মনের দুঃখ চেপে না রাখতে পেরে কেউ কেউ তাঁর কাছে অনুযোগও করেছিলেন ৷ বলাবাহুল্য, দিলওয়ারে প্রতি কটাক্ষপাত ছিল তাতে ৷ তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে জবাব দিয়েছিলেন 'এ লোকটিতে আমি যা দেখতে পেয়েছি-তা দেখতে হলে আপনাদিগকে আমার চোখ ধার করতে হবে ৷ '

আনিসা দিলওয়ারের সাথে আমার যখন পরিচয় তখন তিনি আনিসা খাতুন ৷ কবি দিলওয়ারের সাথে মন দেয়ানেয়ার পালা চলছে ৷ এ পর্যায়ে তাঁদের উভয়েরই যথেষ্ট ত্যাগ ও তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে এগুতে হয় ৷ বরং বলা চলে কঠিন অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয় ৷ দিলওয়ারের পরিবারে আনিসা গ্রহণযোগ্য ছিলেন না, প্রথমত আনিসার পেশাগত কারণে এবং দ্বিতীয়তঃ আনিসা বহিরাগত বলে ৷ কিন্তু আনিসার দুর্জয় প্রেম এবং দিলওয়ারের উপর তাঁর অবিচল আস্থাই তাঁকে করে বিজয়িনী ৷ আনিসা খাতুন সার্থক ভাবেই হয়ে গেলেন আনিসা দিলওয়ার ৷ এরপর প্রায় দেড় দশক কাল স্থায়ী তাদের দাম্পত্য জীবনের পরিচয় ৷ এর ভেতর কখনও তাঁরা একে অন্যকে ছেড়ে দীর্ঘদিন একা কাটাতে পারেননি ৷ চাকুরী নিয়ে আনিসা ঢাকায় পাড়ি জমালে দিলওয়ারও হয়েছেন ঢাকা প্রবাসী ৷ আবার আনিসাকে সিলেট ফেলে রেখে দিলওয়ার মোটা মাইনের বৈদেশিক দূতাবাসের চাকুরী নিয়ে ঢাকা গেলেন সত্য- কিন্তু টিকে থাকতে পারেননি ৷ অদৃষ্টের কি নির্মম পরিহাস! এমনি একটি প্রেমময় সুখের নীড় অকালে ঝরে পড়লো ৷

আনিসা একটি বহিরাগত অবাঙ্গালী সম্প্রদায়ভুক্ত ছিলেন ৷ কিন্তু বলে না দিলে তা বুঝার উপায় ছিলনা ৷ চলনে বলনে এবং মনে প্রাণে তিনি ছিলেন নিখুঁত বাঙ্গালিনী ৷ বাংলা লেখার চমত্‍কার হাত ছিল তাঁর ৷ দিলওয়ারের অনেক বন্ধু বান্ধবের সাথেই তাঁর পত্রালাপ চলতো ৷ তাঁর লেখা চিঠিগুলো এক পরিশীলিত মনেরই সাক্ষ্য বহন করে ৷

কঠোর কর্তব্য পরায়ণতা ও দায়িত্ববোধের জন্য কর্মস্থলে কখনও কখনও সহকর্মীদের ঈর্ষা কুড়িয়েছেন তিনি ৷ ষাট দশকের শেষার্ধে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সাম্প্রদায়িক হানাহানিতে তাঁর প্রাণ সংশয়েরও সম্ভাবনা ছিল ৷ কিন্তু কোন কূটচক্রীর চক্রান্তের থাবাই তাঁকে স্পর্শ করার স্পর্দ্ধা দেখাতে পারেনি ৷ মানবতাবোধের শুচিশুভ্র চেতনাই জয়ী হয়েছে পরিণামে ৷ আমরাও রেহাই পেয়েছি এক মসীলিপ্ত কলঙ্কের দায়ভার থেকে ৷ কিন্তু শেষরক্ষা তো হলো না ৷ যে মারীমড়ক আর মরা নিয়ে তাঁর নিত্যদিনের কারবার-তারই শিকার হলেন তিনি ৷ নিদারুণ এক সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে অকালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন ৷ ঝরে পড়লো এক অত্যুজ্জ্বল তারকা-আমাদের অতি পরিচিত দিগ্বলয় থেকে ৷

আনিসা আগাগোড়া চাকুরীজীবী হওয়াতে ঘরকন্না সম্পর্কে তেমন নজর দেবার অবকাশ পেতেন না ৷ সেজন্য তাঁর সঙ্কোচের অবধি ছিলনা ৷ মনপ্রাণ দিয়ে অতিথি সত্‍কার করেও ভাবতেন বোধ হয় কোন অপূর্ণতা থেকে গেল ৷ অথচ রান্নাবান্না জাতীয় কাজকর্মে অন্য যে কোন গিন্নীর চেয়েই তিনি যে কম যেতেন না তা আমাদের ভালভাবেই জানা ছিল ৷ তাঁর ঘর থেকে কোনদিন খালিমুখে ফিরে এসেছি-একথা কস্মিনকালেও মনে পড়ে না ৷

আনিসা ছিলেন ধর্মভীরু মহিলা ৷ নামাজ রোযায় চিরদিনই পাকা পোক্ত ৷ তাঁর ধর্মভীরুতাই কবি দিলওয়ারের পক্ষে পরিবারের আকার ছোট রাখার পথে ছিল প্রধান অন্তরায় ৷ অথচ এতে যে আর্থিক চাপ বৃদ্ধি পায় সেটাও বহন করতেন প্রধানতঃ তিনি নিজে ৷

কবি দিলওয়ারের ভক্ত সংখ্যা অগণন ৷ সাধারণ লেখাপড়া জানা লোক থেকে অতি উচ্চ শিক্ষিত লোকও তাঁর গুণগ্রাহী ৷ সেদিক দিয়ে আনিসাও কম ছিলেন না ৷ ঈর্ষাযোগ্য জনপ্রিয়তার অধিকারিনী ছিলেন তিনি ৷ তাঁর অসংখ্য ভক্তবৃন্দের স্নেহের উত্‍পাত দিলওয়ারও মাঝে মাঝে সহ্য করতে পারতেন না, তার গার্হস্থ্য জীবনে বিশৃঙ্খলা দেখা দিত বলে ৷ আনিসা তাই দিলওয়ারের অজান্তেই তাদের দেখাশোনা করতেন ৷ আর সবচেয়ে বেশী উপকৃত হত গরীব লোকজন-যাদের পক্ষে অতি সামান্য ফিস দিয়েও ডাক্তার দেখানো সম্ভব নয় ৷ তাদের জন্য আনিসা ছিলেন একাধারে ডাক্তার, কম্পাউন্ডার ও নার্স ৷ পরিচিত ও স্বল্প পরিচিত এমনকি অপরিচিত কত লোক যে তাঁর নিকট ইনজেকশন ও ওষুধ নিতে আসতো তার ইয়ত্তা নেই ৷ ইনজেকশন দেবার চমত্‍কার হাত ছিল আনিসার ৷ এজন্য কেউ পয়সা দিতে চাইলেও হাসিমুখে তা ফিরিয়ে দিতেন ৷ তাঁর নিজের আর্থিক সঙ্গতির কথাটিও তখন তাঁর খেয়াল থাকত না ৷ এ রকম আপনভোলা দরদী প্রাণ আজকের দিনে বিরল ৷

কপট ভমী আর রুগ্ন মানসিকতা যেখানে সার্বজনীন, আনিসা ছিলেন সেখানে এক উজ্জ্বল ব্যতিক্রম ৷ তাঁর অবস্থান ছিল সর্বপ্রকার নীচতা ও রুদ্রতার উর্ধ্বে ৷ তিনি যা সত্য বলে জানতেন, তা থেকে তিলমাত্র বিচ্যুত হতেন না ৷ আপন সিদ্ধান্তে বরাবরই তিনি ছিলেন অবিচল এবং আপোষহীন ৷ কর্তব্যকর্মে নিষ্ঠা অথচ উদার মানবিকতা এ দু'টোর অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছিলে আনিসা চরিত্রে ৷ তাঁর অকাল বিয়োগে কবি দিলওয়ারের ব্যক্তিগত জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সন্দেহাতীতভাবে ৷ কিন্তু তার চেয়ে বহুগুণ বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমাদের রুগ্ন সমাজ।

আনিসা দিলওয়ারের কথা ভাবতে গেলে বরাবরই আমার একটি অনির্বাণ দীপশিখার কথা মনে পড়ে ৷ সে দীপশিখা শুধু আলো দেয়না, অন্যকেও আলো দানে প্রণোদিত করে ৷ জন্মঃ ১৭ মার্চ, ১৯৩৭ মৃত্যুঃ ২৩ মার্চ, ১৯৭৫"

৩ পুত্র ও ৩ কন্যা কবি-কে উপহার দেন আনিসা খাতুন ৷ যথাক্রমে পুত্রকন্যা হলেন- শাহীন ইবনে দিলওয়ার (মিলু) [যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী শাহীন ইবনে দিলওয়ার একজন উচ্চশিক্ষিত সরকারী চাকুরিজীবী], কিশওয়ার ইবনে দিলওয়ার (রানা) [কিশওয়ার ইবনে দিলওয়ারও বাংলা-সাহিত্যের একজন খ্যাতিমান কবি, জন্ম ১১ জুন ১৯৬২-মৃত্যু ৮ ডিসেম্বর ২০০৬], নাহিদ বিনতে দিলওয়ার রুমি [সাহিত্যপ্রিয় প্রতিভাময়ী নাহিদ ইসলাম বর্তমানে যুক্তরাজ্য প্রবাসী], রোজিনা বিনতে দিলওয়ার নোমি [রোজিনা ইসলাম জীবন সংগ্রামী গৃহিনী], সাজিয়া বিনতে দিলওয়ার সুমনা [বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী সাজিয়া রহমান যুক্তরাষ্ট্রের হান্টার কলেজ থেকে শিক্ষা বিষয়ে ডিসটিংকশনে বিএ ডিগ্রি লাভ করেন] এবং কামরান ইবনে দিলওয়ার (কামু) ৷ ১৯৭৫-এ দূরারোগ্য ব্যাধি টিটেনাসে আক্রান্ত হয়ে আনিসা খাতুন ইহলোক ত্যাগ করেন ৷ আনিসার মৃত্যুর পর তার সংসারের হাল ধরার জন্যে আসেন আনিসারই সহোদরা ওয়ারিসা খাতুন ৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উর্দূতে অনার্সের ছাত্রী ওয়ারিসা খাতুন ঐ বছরই (১৯৭৫) কবি-র সঙ্গে বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ হয়ে তার মরহুমা বোনের সন্তানদের দেখার দায়িত্ব নেন ৷ ওয়ারিসার গর্ভে কবি-র ১টি কন্যা ও ২টি পুত্র আসে ৷ কন্যা নওশাবা বিনতে দিলওয়ার শৈশবেই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ৷ তার পরে পুত্রদের মধ্যে যথাক্রমে আলী ইমরান ইবনে দিলওয়ার (হাসনু) [বর্তমানে যুক্তরাজ্যে শিক্ষারত] এবং সর্বকনিষ্ঠ রিদওয়ান ইবনে দিলওয়ার (রনি) [শিক্ষার্থী ক্রিকেটার] ৷ ২০০৩ সালে ওয়ারিসা খাতুনও কবি-কে ছেড়ে দূরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ইহলোক ত্যাগ করেন ৷

ক্ষেত্র ভিত্তিক অবদান

*চিরায়ত পথ ধরে যারা যায় আর যারা আসে
মুদ্রার দুপিঠ তারা, প্রেম নিয়ে মাটিতে আকাশে।
'গণমানুষের কবি' দিলওয়ার-এর ক্ষেত্র সাহিত্য ৷ আর সাহিত্যের কবিতা-র অধ্যায়ে তাঁর নাম একটি নামেই উদ্ভাসিত অমৃত 'দিলওয়ার' ৷ তিনি গান, ছড়া, প্রবন্ধ যে পরিমাণে রচনা করেছেন, সে পরিমাণে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়নি ৷ এযাবত্‍ প্রকাশিত গ্রন্থের তালিকা নিম্নরূপ-

জিজ্ঞাসা (কাব্যগ্রন্থ, ১৯৫৩), ঐক্যতান (কাব্যগ্রন্থ, ১৯৬৪), পুবাল হাওয়া (গানের বই, ১৯৬৫), উদ্ভিন্ন উলস্নাস (কাব্যগ্রন্থ, ১৯৬৯), বাংলা তোমার আমার (গানের বই, ১৯৭২), ফেসিং দি মিউজিক (ইংরেজি কাব্যগ্রন্থ, ১৯৭৫), স্বনিষ্ঠ সনেট (কাব্যগ্রন্থ, ১৯৭৭), রক্তে আমর অনাদি অস্থি (কাব্যগ্রন্থ, ১৯৮১), বাংলাদেশ জন্ম না নিলে (প্রবন্ধগ্রন্থ, ১৯৮৫), নির্বাচিত কবিতা (কাব্যগ্রন্থ, ১৯৮৭), দিলওয়ারের শত ছড়া (ছড়ার বই, ১৯৮৯), দিলওয়ারের একুশের কবিতা (কাব্যগ্রন্থ, ১৯৯৩), দিলওয়ারের স্বাধীনতার কবিতা (কাব্যগ্রন্থ, ১৯৯৩), ছাড়ায় অ আ ক খ (ছড়ার বই, ১৯৯৪), দিলওয়ারের রচনাসমগ্র ১ম খ- (১৯৯৯), দিলওয়ার-এর রচনা সমগ্র ২য় খ- (২০০০), ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রীর ডাকে (ভ্রমণ, ২০০১) ৷

১৯৬০ সালে এই কবি-র একটি গান দিয়ে সিলেট রেডিও স্টেশনের উদ্বোধন করা হয় ৷ ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ গ্রামোফোন কোং লিঃ কবি-র ৪টি গান দিয়ে একটি ডিস্ক বাজারে ছাড়ে ৷ গানগুলো হলো- মুর্শিদ আমি খুঁজবো না গো, তুমি রহমতের নদীয়া, মন আমার কেমন করে, ও নদীর ঘাটে জল আনিতে গিয়া ৷ এখানে একটি রূঢ় সত্য কথা বলতে হচ্ছে যে গ্রামোফোন কোম্পানী লিঃ কবি দিলওয়ার-কে তাঁর গানগুলোর কোনো রয়েলটি দেয়নি ৷ তাঁর একাধিক গণসঙ্গীত মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রচারিত হয়েছিল এর মধ্যে রয়েছে- 'মা আমার গলা ধরে বলেছে', 'বলো বুলবুলি কি কাকের খাঁচায়', 'আয়রে চাষী মজুর কুলি', 'চলছে মিছিল চলবে মিছিল' প্রভৃতি ৷ দেশের একজন অন্যতম প্রধান কবি'র গান, কবিতা বা রচনাকে দেশের প্রচার মাধ্যমগুলি (রেডিও, টিভি ইত্যাদি) যথার্থ মূল্যায়ন করেছে কিনা, এটা অবশ্যই সন্ধান করে দেখার বিষয় ৷

পুরস্কার-সংবর্ধনা

*মৃত গ্রহগুলি জানে দেখা দিলে প্রেমের আকাল
অনিবার্য এই গ্রহে ভয়াবহ রোবটের কাল!
স্বর্ণ শাপলা এবং তাম্রফলকে লিখিত শ্রদ্ধাঞ্জলিসহ দিলওয়ার-কে ১৯৭৮ সালের ৭ মার্চ সিলেটের সর্বস্তরের নাগরিক কর্তৃক সংবর্ধনা দেওয়া হয় ৷ সভাপতিত্ব করেন অধুনা প্রয়াত বিশিষ্ট চা-কর ও যুগভেরী সম্পাদক মিঃ আমিনুর রশিদ চৌধুরী এবং প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান ডক্টর কাজী আব্দুল মান্নান ৷ এটি ছিলো কবি জীবনের একটি স্মরণীয় ঘটনা ৷

"বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে কবিতার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ" বাংলা একাডেমী ১৯৮০ সালে দিলওয়ার-কে সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত করে এবং পরে ১৯৮১ সালে ফেলোশিপ প্রদান করে ৷ ১৯৮২ সালে কমলগঞ্জ গণমহাবিদ্যালয় কবিকে সংবর্ধনা দেয় ৷ কমলগঞ্জ গণমহাবিদ্যালয়ে প্রদত্ত কবি সম্বর্ধনা ছিলো নানা কারণে অবিস্মরণীয় ৷ ১৯৮৭ সালের ৯ আগস্ট যুক্তরাজ্যে লন্ডনস্থ সিলেট সেন্টারে তাঁকে যুক্তরাজ্য প্রবাস কর্তৃক সংবর্ধনা দেয়া হয় ৷

ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদ কর্তৃক ১৯৮৬ সালের আবুল মনসুর সাহিত্য পুরস্কার লাভ ৷ ১৯৯১ সালে দেওয়ান গোলাম মোর্তাজা স্মৃতিপদক ও সম্মাননা লাভ ৷ রাগীব-রাবেয়া সাহিত্য পুরস্কার লাভ, সুকান্ত সাহিত্য পুরস্কার লাভ এবং অন্যান্য ৷ ২০০১ সালে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সংঘ সংবর্ধনা প্রদান করে ৷ বাংলাদেশের পক্ষে কবি দিলওয়ার এবং ভারতের পক্ষে বরেণ্য আলোকচিত্রী রবিন সেনগুপ্তকে সংবর্ধনা দেয়া হয় ৷ মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার, শিক্ষামন্ত্রী অনিল সরকার, অর্থমন্ত্রী বাদল চৌধুরী ও উভয় দেশের আরও বহু গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন ৷

২০০৭ সালের জুনে যুক্তরাষ্ট্রের জ্যামাইকাস্থ তাজমহল হোটেলে সংবর্ধনা প্রদান করে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীবৃন্দ ৷ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. কবীর চৌধুরীর ভাষায়- 'কবি দিলওয়ারের সাহিত্য কর্মের জাতীয়ভাবে যথার্থ মূল্যায়ন করা হলে তিনি দেশবাসীকে নবেল প্রাইজ উপহার দিতে পারতেন ৷ ' প্রসঙ্গতঃ স্বাধীনতা পদক- একুশে পদক এই দু'টি পদক কবি দিলওয়ারকে বহু আগেই প্রদান করা উচিত ছিল ৷ এটা তাঁর অনুরাগীদের অভিব্যক্তি ৷ এছাড়া ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত কবি দিলওয়ার পরিষদ কবির সাহিত্য কর্ম প্রকাশনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে বেসরকারী উদ্যোগে ৷

হৃদয় আমার নাম, প্রিয়তমা, ডাকো দিলওয়ার
লাশখেকো কাঁদে কীট, পায়না যে নাগাল আমার!

একটি সাক্ষাত্‍কার

ডক্টর ভীষ্মদেব চৌধুরী কর্তৃক কবি দিলওয়ারের নেয়া একটি সাক্ষাত্‍কার 'প্রশ্নের মুখোমুখি কবি দিলওয়ার' (দ্রষ্টব্য কামরান ইবনে দিলওয়ার সম্পাদিত দিলওয়ার, ১ম খ-; ১ জানুয়ারী ২০০৫)-এর অংশ বিশেষ থেকে বোঝা যাবে কবি-র জীবনে দুই সহোদরা আনিসা খাতুন এবং ওয়ারিসা খাতুনের অবদান কিরূপ ছিলো-
প্রশ্ন :- আপনার কবিজীবনের আকাশজুড়ে অবস্থান ছিলো আপনার প্রথম স্ত্রী-আনিসা দিলওয়ার-এর ৷ তাঁর অকালমৃত্যু আপনার কবিতা ও জীবনকে কতটুকু ও কীভাবে প্রভাবিত করেছে?

দিলওয়ার :- প্রশ্নটির সরাসরি উত্তর হতে পারে, আনিসা-র অকালমৃত্যু আমার কবিজীবনকে প্রচন্ড শিলাবৃষ্টিতে বিপর্যস্ত করতে পারতো যদি না বিস্ময়কর দ্রুত-গতিতে তার প্রিয়তমো বোন ওয়ারিসা এগিয়ে আসতো ৷ অলৌকিকতা বলে একটি শব্দ আছে, যে শব্দটি একাধারে মরুভূমি ও তৃণাঞ্চলের অর্থ বহন করে ৷ আপাদমস্তক সুশিক্ষিত ও সুমার্জিত চেতনার অধিকারিণী ওয়ারিসা মাতৃহারা তিন পুত্র ও তিন কন্যাকে যেভাবে ব্যাকুল বাহু মেলে বুকে তুলে নিয়েছিলো, তার সেই অভাবনীয় আচরণ অলৌকিকতার একখন্ড তৃণাঞ্চলরূপেই আমার তৃতীয় দৃষ্টিতে ধরা পড়েছিলো ৷ মৃত্যু পথযাত্রী আনিসা আমাকে প্রেম ও সেবা দিয়ে রূপকথা-র প্রেমিকা-র ভূমিকা পালন করে গেছেন ৷

প্রশ্ন :- আনিসার অনুজাই আপনার দ্বিতীয় ঘরনী হয়েছেন ৷ আপনার ঔরসজাত এবং এই দুই সহোদরার গর্ভজাত সন্তানদের নিয়েই পরিপূর্ণ সংসার আপনার ৷ এই দুই নারীর তুলনা করুন ৷

দিলওয়ার :- মা আনিসা-র মৃত্যুর পরে পুত্র কিশওয়ার ইবনে দিলওয়ার একটি স্বপ্ন দেখেছিলো ৷ ঘুমন্ত অবস্থায় সে দেখেছিলো, একটি হোটেলের কামরায় খালা ওয়ারিসাসহ কিশওয়ার অবস্থান করছে ৷ সে ছিলো বিছানায় শায়িত আর খালা ছিলেন একখানি চেয়ারে বসা ৷ হঠাত্‍ তার নজরে পড়ে, হোটেলের ছাদ নেই এবং আকাশ থেকে তীরবেগে নেমে আসছে তার মা আনিসা ৷ তার পরেই ঘটলো এক অঘটন ৷ আনিসা সোজা এসে প্রিয়তমা বোন ওয়ারিসা-র মাথা ভেদ করে ভেতরে ঢুকে গেলো-হয়ে গেলো একাত্ম, অভিন্ন ৷ এভাবেই আনিসা ও ওয়ারিসা-র তুলনা করা যায় ৷ ব্যতিক্রম আরেক জায়গায় ৷ আনিসা ছিলেন, রোগশোকে আর্তপীড়িত সর্বস্তরের মানুষের সেবায় আত্মবিস্মৃত এক অভূতপূর্ব ফলপ্রসূ সেবিকা মহিলা ৷ আমি বিশ্বাস করি, আলবেনিয়ান সেবিকা মহিলা মাদার তেরেসা যদি জীবদ্দশায় আনিসা-র কিংবদন্তিতুল্য সেবা ও চিকিত্‍সা জ্ঞান দেখার সুযোগ পেতেন, তাহলে নির্দ্বিধায় আনিসাকে মাথায় তুলে নিতেন ৷ অন্যদিকে ওয়ারিসা-র মধ্যে ছিলো সেইরকমই নিবেদিত সেবামূলক মানবীয় গুণাবলী ৷ তবে তার সেই মহতী কর্মতত্‍পরতা বহুমুখী ছিলো না ৷ প্রসঙ্গতঃ আমি সবিনয়ে বলতে চাই যে, বাংলাদেশ যদি ইতিহাস বিখ্যাত মানবতা-বিরোধী "মাত্‍স্যান্যায়" নামক কলঙ্কের উত্তরাধিকারী না হতো, যদি এই দেশটি তার পরিচালক গোষ্ঠীর হাতের ক্রীড়নক বারবার না হতো তাহলে আনিসা ও ওয়ারিসা এই দু'বোনের অবদানের কথা সরকারী ভাবে সর্বোচ্চে স্থান পেতো ৷

প্রশ্ন :-'গণমানুষের কবি দিলওয়ার'-আপনার প্রসঙ্গে উচ্চারিত এই অভিধাটি আমি আমার শৈশব থেকে শুনে আসছি ৷ দক্ষিণ সুরমার ভার্থখলার রক্ষণশীল খানমঞ্জিল-এর সন্তান হয়ে কীভাবে আপনি গণমানুষের অংশী হয়ে উঠলেন?

দিলওয়ার :- এই প্রশ্নের উত্তরে একটি ধ্রুপদী সত্য আত্মগোপন করে আছে ৷ আশির দশকে ঢাকা থেকে আগত সাহিত্য পত্রিকার এক প্রতিনিধি এরকম একটি প্রশ্ন আমাকে করেছিলেন ৷ উত্তরে তাকে অবাক করে দিয়ে আমি বলেছিলাম- তার পিতামহের নাম কি-প্রপিতামহের নাম কি-প্রপ্রপিতামহের নাম কি... ৷ প্রতিনিধি বেশী দূর এগোতে পারেননি ৷ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে স্থির হয়ে গিয়েছিলেন ৷ তখন আমি তাকে বুঝিয়ে দিয়েছিলাম, আমি আমার গণমানবিকতাকে খুঁজি ধাপে ধাপে পিছিয়ে গিয়ে মানুষের ক্রমোন্নতির উত্‍সমুখে দাঁড়িয়ে ৷ এই গণমানবিকতা প্রকৃতপক্ষে মানবতা নামক মহতী শব্দেরই প্রোটোপস্নাজম ৷

(প্রশ্নের মুখোমুখি কবি দিলওয়ার, দিলওয়ার, ১ম খ-, ১ জানুয়ারী ২০০৫)

No comments: