| Home | Menu | Poems | Poets | Reading | Theme | Biography | Articles | Photo | Dictionary | Chat | Video | Shop | Extra | Jokes | Games | Science | Bio | বাংলা

রাজিয়া খান Rajia Khan Biography 1936-



জন্ম ও বংশ পরিচয়

রাজিয়া খান১৯৩৬ সনের ১৬ই ফেব্রুয়ারি ফরিদপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন ৷ পিতা তমিজউদ্দিন খান অবিভক্ত বাংলার মন্ত্রী, আইন সভার সদস্য এবং জাতীয় পরিষদের স্পীকার ছিলেন৷ তিনি বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে কারাভোগ করেন৷ মাতা রাবেয়া রাহাত খান৷


If you cannot view the fonts properly please download and Install this file.

পারিবারিক জীবন

ছোটবেলা থেকেই পারিবারিক পরিবেশ রাজিয়া খানের মধ্যে প্রগতিবাদী চেতনা গড়ে উঠতে সাহায্য করে৷ পরবর্তীতে সাংসারিক জীবনেও তিনি সে ধারা বজায় রাখেন৷ রাজিয়া খানের স্বামী আনোয়ারুল আমিন ব্যাংকার ছিলেন৷ ১ ছেলে ও ১ মেয়ে৷ ছেলে কায়সার তামিজ আমিন বর্তমানে পেশায় ব্যাংকার এবং মেয়ে আশা মেহরিন সাংবাদিক৷

শৈশব কাল

কলকাতায় ছিলেন ১০ বছর৷ তখন তাঁর বয়স বছর দশেক৷ শৈশবের সেই স্মৃতি, কলকাতার সেই রূপ তাঁর লেখায় বারবার ফিরে এসেছে৷ সেই সময় কলকাতা ছিল বিরাট মেট্রোপলিটন শহর, কলকাতা শহরের সাংস্কৃতিক অঙ্গন ছিল বিশাল উদার৷ মুসলমান হিন্দুর বিভেদ তখনও তৈরি হয়নি৷ বৃটিশরা নানা ধরনের জটিলতা তৈরি করলেও সাধারণ মানুষের জীবনে তখনও তাঁর কোনও প্রভাব ছিল না৷ খুব স্বাভাবিকভাবেই কলকাতার সেই উচ্ছল জীবন তাঁর শৈশবে প্রভাব ফেলেছিল এবং তিনি সারাজীবন সেই আনন্দময় স্মৃতি মনে রেখেছেন৷

ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব নিয়ে কিছু কথা

'আমি ছোট থেকেই স্বাধীনচেতা ছিলাম৷ রাষ্ট্র ভাষা বাংলা না হয়ে উর্দূ হবে শোনার পর থেকেই ভীষন খারাপ লাগছিল৷ চারিদিকে উত্তাল আন্দোলন থেকে প্রেরনা পাচ্ছিলাম৷ কিন্তু কিছু করার ইচ্ছা থাকলেও কি করব বুঝতে পারছিলাম না৷ সেই সময় আমার ম্যাট্রিক পরীক্ষা সামনে৷ চাইলেও ঠিকভাবে নেতৃত্ব দেয়া সম্ভব ছিল না৷ নিজেদের বাসা রেখে মামা বাড়ি গেন্ডারিয়ার পাঠিয়ে দিল বাড়ির সবাই যাতে ঠিকমত পড়াশুনা করতে পারি৷ আমার অভ্যাস ছিল নাটক করা আর ঘুরে বেরানো৷ কিন্তু মামা বাড়িতে মামা বাড়ির বাইরে বেরুনোই বন্ধ করে দিল৷ আর এর মধ্যেই দোকান থেকে কালি কিনে এনে পোস্টার লাগিয়ে আশেপাশের বাড়ি বাড়ি ঘুরে বাড়ির গৃহিনীদের একত্রে করে একটা শোভাযাত্রা করি৷'

অবজারভার পত্রিকার সম্পাদক মন্ডলীতে যোগ দেয়ার কারণ

অবজারভারে কাজ করার সময়কার কথা বলতে গিয়ে রাজিয়া খান বলেন, "ইংল্যান্ড থেকে এসে অপেক্ষা করছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরির জন্য৷ এই সময় অবজারভার থেকে বলা হলো সপ্তাহে তিনটি করে সম্পাদকীয় লেখার জন্য৷ কাজটা এতো চ্যালেঞ্জিং ছিল যে আমার তা ভালো লাগতো৷ সেখানে সান ডে ম্যাগাজিন এডিট করতাম, নিজের একটা কলাম ছিল সেটার কাজ করতাম, বই এর রিভিউ, নাটকের রিভিউ করতাম যা আমার কাছে খুবই ভালো লাগতো৷ সম্পাদক মন্ডলীতে কাজ করার অভিজ্ঞতার বেশ ভালো ছিল৷ বর্তমান সময়েও সাধারণত কোনও মেয়েকে এডিটরিয়াল বোর্ডে কাজ করতে দেখা যায় না৷ সেখানে আমার কাজটা চ্যালেঞ্জিং তো বটেই৷"

সম-অধিকারের প্রশ্নে পুরুষের ভূমিকা কি বলে মনে করেন

মেয়েদের কাজটাকে সাধারনত কেউ মনে রাখে না আর সেটার স্বীকৃতিও দেয় না৷ তবে এই অবস্থার কারণ মেয়েরাই৷ এখানে পুরুষত্বান্ত্রিক সমাজই শুধুমাত্র দায়ী নয়৷ আমরা প্রায়ই মেয়েদের সব বিষয়ই পুরুষত্বান্ত্রিক সমাজের উপর চাপিয়ে দেই যেটা মোটেও ঠিক না৷ আমাদের সমাজে এমন অনেক পুরুষ আছেন যাদের অনেক কাজের স্বীকৃতি সমাজ দেয় না৷ তাই সার্বিক বিষয়টি হচ্ছে সমাজে কাজের স্বীকৃতি প্রাপ্তির জন্য না ভেবে কাজ করে যাওয়া৷ রাজিয়া খান নারীর সম-অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তার পূর্ন সমর্থনের কথা বলেন, তবে নারীদের আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে এবং প্রাথমিক সংগ্রামে নারী সমাজ অনেক এগিয়ে গেছেন বলে তিনি মন্তব্য করেন৷ এখানে প্রাথমিক সমাজ বলতে তিনি সমাজের সেই শ্রেনীকে বুঝিয়েছেন যারা কম মজুরিতে দৈনিক বা মাসিক আয়ে কাজ করেন৷ এই শ্রেনীর নারীরা এখন নিজেদের অধিকার নিয়ে লড়াই করতে পারছে৷ মজুরি বৈষম্য যারা তৈরি করছে তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে পারছে৷ অধিকার আদায়ের এই সংগ্রামে নারী পুরুষ উভয়ের সম্পৃক্ততা অত্যন্ত জরুরি৷ এর ফলে অদূর ভবিষ্যতে সব সমাজেই নারীর সম-অধিকার দাবি সফল হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন৷

শিক্ষা জীবন

রাজিয়া খান কলকাতা ও করাচিতে স্কুল, কলেজ জীবন সমাপ্ত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে অনার্স ও এম এ পরীক্ষায় প্রথম হন৷ ব্রিটিশ কাউন্সিলের স্কলারশীপ নিয়ে ইংল্যান্ডে পড়তে যান৷ সেখান থেকে তাঁর পিএইচ.ডি ডিগ্রীর সব কাজ সমাপ্ত করে কলকাতায় আরও কিছু রিসার্চ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি বিভাগে পিএইচ.ডি ডিগ্রী লাভ করেন৷

কর্মজীবন

এম এ পরীক্ষায় প্রথম হওয়ার পর তিনি কর্মজীবনের শুরু করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক হিসেবে৷ পরবর্তীতে ইংল্যান্ড থেকে ফিরে তিনি অবজারভার পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলীতে যোগ দেন৷ পাশাপাশি কাব্য চর্চার গভীরভাবে জড়িয়ে পড়েন৷ এখানে তাঁর লেখা ব্যঙ্গ কলাম- 'কালচার কেটল' তীক্ষ্ণ লেখনীর জন্য জনপ্রিয় হয়৷ ১৯৫৮ সাল থেকে সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজে অধ্যাপনার মধ্য দিয় পুনরায় শিক্ষকতার জীবন শুরু করেন৷ পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে অধ্যাপনা করেন৷ এবং এই বিভাগের প্রধান হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন৷ শিক্ষকতা ছাড়াও তিনি দেশের খ্যাতনামা বিভিন্ন সংবাদপত্রে সাংবাদিক ও সম্পাদক রূপে কাজ করেছেন৷ ড. রাজিয়া খান ইউনিভাসিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ-এ ইংরেজি বিভাগের ডিন হিসেবে কর্মরত ছিলেন৷

সাহিত্য কর্ম

রাজিয়া খান পঞ্চাশ দশকে সাহিত্য ও সংস্কৃতির অনুরাগী ও প্রগতিবাদী লেখিকা হিসেবে সাহিত্যের অঙ্গনে এগিয়ে আসেন৷ লেখিকা হিসেবে তিনি প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন৷ মূলত কবি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও পরে উপন্যাসিক হিসেবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন৷ ১৮ বছর বয়সে লেখা 'বটতলার উপন্যাস' ব্যাপকভাবে সাহিত্যাঙ্গনে আলোড়ন সৃষ্টি করে৷ তাঁর মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক উপন্যাস 'দ্রৌপদী' এপার ওপার দুই বাংলায় সমাদৃত৷ তাঁর জনপ্রিয় বই 'বটতলার উপন্যাস' (১৯৫৯) ও 'অনুকম্প' (১৯৫৯) যে উপন্যাসগুলো এক সূত্রে গ্রথিত তার নাম প্রতিচিত্র (১৯৭৫), চিত্রকাব্য ও উপসংহার৷ অন্যান্য বই- অনুকম্প, Argus under Anaesthesia, cruel April, সোনালী ঘাসের দেশ (বাংলা কবিতা), চিত্রকাব্য, হে মহাজীবন, নোংরা নাটক: তিনটি একাঙ্কিকা, আবর্ত (চ.ঊ.ঘ. পুরস্কৃত নাটক), তমিজুদ্দিন খানের আত্ম কথা (বাংলা অনুবাদ)৷ দ্রৌপদী, পাদবিক, Multi Dimensional vision in George Eliot, A Different spring৷ জহির রায়হানের 'আরেক ফাল্গুন' উপন্যাসের ইংরেজি অনুবাদ৷

মঞ্চে অভিনয়

মঞ্চ অভিনয়ে এক সময় রাজিয়া খানের দৃপ্ত পদচারণা ছিল৷ মাত্র ১৪/১৫ বছর বয়সে নাটক 'পাগল হাওয়া'য় অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি মঞ্চে কাজ শুরু করেন ৷ এরপর 'বিজয়া' নাটকে মালিনী'র ভূমিকায় অভিনয় করেন৷ স্কটরস ক্লাবের নাটকে ৷ মুনীর চৌধুরী ছিলেন 'বিলাসবিহারী' ৷ এরপর মঞ্চের সঙ্গে জড়িয়ে যাই৷ অভিনয় করেন নীলদর্পন, মেঘমুক্তি, দুইপুরুষ, বিদ্রোহী পদ্মা'য় ৷ কৃষ্ণকুমারী'তে অভিনয়ের মাধ্যমে মঞ্চ অভিনয়ের ইতি টানলেও সত্তরের দশকে ইংরেজী 'রক্তকরবী'তে অভিনয় করেন৷
‌‌‌‌'এছাড়াও বেতারের ভার্সিটি ম্যাগাজিনে Oliver Twist, Anthony & Cleopatra, Antigone এবং Mid-Summer Nights Dream - এ অভিয়ন করি' - বললেন রাজিয়া খান ।

চলচ্চিত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা

রাজিয়া খান চলচ্চিত্র অঙ্গনের সঙ্গেও দীর্ঘ দিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় আসীন ছিলেন৷ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনে যুক্ত ছিলাম দীর্ঘদিন৷ আমার 'Youth Film Society' সেক্রেটারী ছিল বর্তমানের শিল্পপতি আজম চৌধুরী৷ চলচ্চিত্র অনুদান কমিটি, চলচ্চিত্র পুরস্কার কমিটি, সেন্সর বোর্ডে ছিলাম অনেক দিন৷'

ভ্রমণ

ড. রাজিয়া খান অনেকবার যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, মালয়েশিয়া, বার্মা, মিশর, হংকং জাপান, ভারত, সিঙ্গাপুর ও আরব দেশ সফর করেন৷ এর মধ্যে রয়েছে ১৯৭৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ৷ ১৯৭৮ সালে দিল্লীতে কমনওয়েলথ লেখক সম্মেলনে বাংলাদেশের কবিতা শীর্ষক ইংরেজী প্রবন্ধ পাঠ করেন৷ ১৯০৫ সালে ভেনিসে পি.ই.এন সম্মেলনে প্রবন্ধ পাঠ করেন৷ এছাড়া ১৯৮৪ সালে চীন সরকারের আমন্ত্রনে চীনে যান৷

পুরস্কার ও সম্মাননা

রাজিয়া খান তাঁর সাহিত্য কর্মের জন্য ১৯৭৫ সালে বাংলা একাডেমী পুরস্কার লাভ করেন৷ আর্বত' নাটকটি পি,ই,এন পুরস্কার প্রাপ্ত হয়৷ ১৯৯৭ সালে একুশে পদকে ভূষিত করা হয় (শিক্ষার জন্য)৷ রাজিয়া খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট কার্যকরী সংসদ, ফিল্ম সেন্সর বোর্ড, জাতীয় চলচ্চিত্র বিচারক কমিটির সদস্য এবং রোকেয়া হলের প্রভোস্ট (১৯৭৭) ছিলেন৷ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ফেডারেশনের সহ-সভাপতি হিসেবে পর্তুগালে চলচ্চিত্র উত্‍সবে বিচারকও নির্বাচিত হন৷ তিনি বহু সাংস্কৃতিক, সামাজিক সংগঠনের পৃষ্ঠপোষক ও বাংলা একাডেমীর ফেলো৷

No comments: